সোনারগাঁও একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর। বর্তমান রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত এই আকর্ষণীয় সোনারগাঁও। সোনারগাঁও জাদুঘর (Sonargaon Museum) যার প্রকৃত নাম বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থান। বর্তমানে Symbol of National Pride and Identity হিসাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত জাদুঘরটি বাংলাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। বিশেষ করে পিকনিক স্পটে শীতকালে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণে আসেন। জাদুঘরটি পাল সাম্রাজ্যের গয়না, মুদ্রা,পেইন্টিং, পোশাক এবং ভাস্কর্য সহ বিস্তৃত ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে।বর্তমান বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর ১৯৮৩ সালে নতুন রুপে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত একটা জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলে।
সোনারগাঁও জাদুঘর (Sonargaon Museum)
আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন জনপদ হচ্ছে সোনারগাঁও। সোনারগাঁও প্রায় ৩০০ বছর বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি এখন আমরা সোনারগাঁও জাদুঘর নামে চিন।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও তে অবস্থিত এবং এটি দেশের প্রাচীনতম জাদুঘর গুলোর মধ্যে একটি সোনারগাঁও জাদুঘর। এটি ১৯৭০ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক নির্দশন গুলোর জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সোনারগাঁও জাদুঘর ইতিহাস
সোনারগাঁও জাদুঘর নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র বলা চলে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে সোনারগাঁও ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাক্ষী হয়ে আছে।
এখানে ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমল এবং ইসলামের বিভিন্ন রাজ যুগের অনেক প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর যেটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই জাদুঘরে ভাস্কর্য, মুদ্রা, বিভিন্ন শিলালিপি, পেইন্টিং সহ কাঠের খোদাই এর মত অন্যান্য পুরাকৃতি রয়েছে এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী জিনিসের একটি বড় সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত এই সোনারগাঁ জাদুঘর।
ঐতিহাসিক পানাম নগর
পানাম নগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর বা নগরী। কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে পানাম নগরে, যা বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সোনারগাঁওয়ের ১৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই পানাম নগরী গড়ে উঠেছে।সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে উত্তর দিকে হাঁটলেই সহজে পৌঁছানো যাবে অর্ধচন্দ্রাকৃতি পানাম পুলে। শুধু আছে পংকিরাজ ব্রিজ, এই পুল পেরিয়েই পানাম নগর এবং নগরী চিরে চলে যাওয়া পানাম সড়ক। আর সড়কের দুপাশে সারি সারি আবাসিক একতলা ও দ্বিতল বাড়িতে ভরপুর পানাম নগর।
ঐতিহাসিক গোয়ালদী শাহী মসজিদ
ভূঁইয়াদের মধ্যে বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক ঈসা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। সোনারগাঁও বর্তমানে বিক্ষিপ্ত কতগুলো গ্রামের সমষ্টি মাত্র। আমিনপুর,পানাম, গোয়ালদী, শাহ চিল্লাহপুর,মোগরা পাড়া, দমদমা, ভাগলপুর, মহজমপুর এসব গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরা কীর্তিগুলোর ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম, নব্য বিকাশিকা, সম্রাট আকবরের প্রিয় নগরী জান্নাতুল বিলাদ অথবা হজরত জাল্লাল সোনারগাঁওয়ের সেই গৌরবোজ্জ্বল ও রোমাঞ্চকর ইতিহাসের কথাই সগৌরবে ঘোষণা করছে। এসব গ্রামের অন্যতম হলো গোয়ালদী। এ গ্রামে সে সময়ের গৌরবময় দিনের যেসব নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁওয়ের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য প্রাচীনকীর্তি এই মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অনুপম নিদর্শন।
কোথায় অবস্থিত
রাজধানী ঢাকা শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নোংরা পাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সামান্য দুরেই ( প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে) এই ঐতিহাসিক জাদুঘর অবস্থান। গুলিস্তান থেকে ভাড়া ৫০ টাকা নগরাপাড়া বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এবং সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত। আবার বাস স্ট্যান্ড থেকে সোনারগাঁও জাদুঘর জেতে ২০ টাকা করে ভাড়া লাগবে জাদুঘর এ পৌছাতে, সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট।
কিভাবে যাব
মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকার নিয়ে সরাসরি লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে যেতে পারবেন। আর যদি বাসে যেতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে দোয়েল পরিবহন বা স্বদেশ পরিবহনে ৬০ টাকার টিকিট নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশাযোগে জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়ায় সোনারগাঁও জাদুঘরে যেতে হবে। মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কি.মি. ভেতরে সোনারগাঁও যাদুঘরের অবস্থান এবং এর সঙ্গেই রয়েছে পানাম নগরী। সুতরাং যে কেউ বাস, মিনিবাস, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলসহ যেকোনো ধরনের বাহনেই সেখানে যেতে পারেন এবং খুব সুন্দর ভাবে ঘুরে আসতে পারবেন।