রাতারগুল l সিলেট থেকে রাতারগুল কিভাবে যাব?

রাতারগুল
রাতারগুল

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। শহুরে কোলাহল থেকে বের হয়ে দেখুন রাতারগুল দেশের বৃহত্তম সোয়াম্প ফরেস্ট। আপনি চাইলে রাতারগুল ঘুরে আসতে পারেন। রাতারগুল বিশ্বের কয়েকটি জলাভূমির মধ্যে একটি। রাতারগুল বনটি বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের অধীনে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

রাতারগুল

রাতারগুল দেশের বৃহত্তম সোয়াম্প ফরেস্ট। ক্লান্তিকর তাড়াহুড়ো থেকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটি সিলেটের একটি চমৎকার জায়গা। অনেকেই রাতারগুলকে বাংলার আমাজন বলে থাকেন। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় রাতারগুল বনটি অবস্থিত। প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে আপনাকে বনের মধ্য দিয়ে একটি ক্যানো রাইড নিতে হবে। একটি নৌকায় নাইট ক্রুজ নেওয়ার সময় বৃষ্টির দিনে আপনি একটি চমৎকার ভাসমান জীবন অনুভব করবেন!

প্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনে রয়েছে অনেক প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির পতিত হরিণ, কবুতর, ফিঞ্চ, মালারডস, পানকৌড়ি ইত্যাদি দেখা যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, বন্যপ্রাণী, কাঠবিড়ালি, বাঘ ইত্যাদি। উপরন্তু, এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং সাপ রয়েছে। এখানে বেশ কিছু প্রজাতির পাখি ও বানর বিচরণ করে। অভ্যন্তরে, জঙ্গল এমন জায়গায় এত গভীর যে সূর্যের আলো পাতার মধ্য দিয়ে যেতে পারে না এবং জলে পৌঁছাতে পারে না।

রাতারগুল এ কখন যাবেন?

সৌন্দর্যের কারণে সারা বছরই এখানে কমবেশি পর্যটকরা আসেন। তবে রাতারগুল এর আসল সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষাকালে। অর্ধেক গাছ তখন পানিতে ডুবে এক মনোমুগ্ধকর চেহারা তৈরি করে। সংক্ষেপে, রাতারগুল ভ্রমণ মে থেকে নভেম্বরের প্রথম দিকে রাতে ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

রাতারগুল এ কিভাবে যেতে হবে

দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে রাতারগুল যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সিলেটে। ঢাকার সয়দাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল স্টপেজ থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেসসহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস রয়েছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া প্রায় ৪৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া প্রায় ১০০ থেকে ১২০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে সিলেট যেতে প্রায় ৫.৫ ঘন্টা থেকে ৭ ঘন্টা সময় লাগে।

ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪ টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। সকাল ৬:৪০ মিনিটে, জয়ন্তিকা দুপুর ১২:০০ টায়, কালনী বিকেল ৪:০০ টায় এবং উপবন এক্সপ্রেস রাত ৯:৫০ টায় তারা কমলাপুর ছেড়ে যায়। আপনি ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকেও ট্রেনে উঠতে পারেন। ট্রেনের ভাড়া হবে সিট ভেদে জনপ্রতি প্রায় ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৭/৮ ঘণ্টা। সেক্ষেত্রে রাতে উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। রাতভর ভ্রমণ করে খুব ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

সিলেট রুটে চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহনের বাস রয়েছে। ভাড়া প্রায় ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়াও পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯:৪৫ মিনিটে, শনিবার ছাড়া প্রতিদিন। প্রায় ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা সিট ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যেতে সময় লাগে প্রায় ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে রাতারগুল

রাতারগুল জলাভূমিতে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্টে। বিমানবন্দর সড়কে একটি সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজি যায় রাতারগুল বাজারে। ভাড়া জনপ্রতি প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আপনি চাইলে সিএনজির পুরো রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাথাপিছু প্রায় ৫০ প্রতিজনের ভাড়া যা হিসাব করা হয় তার থেকে একটু বেশি হতে পারে। এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় লাগবে।

লোকাল সিএনজি হলে রাতে বাজারে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে যেতে হবে রাতারগুল নৌকা ঘাটে। বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বুক করতে পারেন। ভাড়া হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এছাড়াও সিলেট থেকে সিএনজি, লেগুনা ও মিনিবাস বুকিং নিলে সরাসরি ঘাটে চলে যাবে।

তিনটি নৌকা ঘাট আছে। মোটর ঘাট, মধ্য ঘাট ও চৌরঙ্গী ঘাট। তিনটি ঘাটের মধ্যে চৌরঙ্গী ঘাটই শেষ। এখান থেকে নৌকা ভাড়া তুলনামূলকভাবে সস্তা। একটি নৌকায় একসঙ্গে ৫ জন চড়তে পারে। নৌকা ভাড়া প্রায় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। নৌকাটি লেগুনের চারপাশে ঘুরতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় নেবে।

সিলেটে কোথায় থাকবেন?

সিলেট শহরকে আপনার রাতারাতি ভ্রমণের কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। সিলেট শহরে অনেক হোটেল আছে। আম্বরখানা, দরগা গেট, জিন্দাবাজারে অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে পলাশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, হিল টাউন হোটেল, ব্রিটানিয়া হোটেল, সুপ্রিম হোটেল, ডালাস হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় পর্যটন হোটেল। ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে এখানে রুম পাওয়া যাবে প্রায় ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র্যান্ড প্যালেস, হোটেল নুর জাহান ইত্যাদি। রুমের ভাড়া প্রায় ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত। রুম রেট ঋতু উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।  সিলেটের দরগা গেট এলাকায় অনেক হোটেল আছে, ঠিক সান্তার উপর। সেখান থেকে হোটেল ভাড়া নিতে পারেন।

রাতারগুল এ কি খাবেন কোথায় খাবেন?

দুপুরের খাবারের জন্য রাতারগুলে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। রাতারগুল জলাজঙ্গল থেকে যারা বিষতকান্দি যাচ্ছেন তারা বিশাতকান্দিতে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। তা না হলে সিলেট শহরে খাবারের প্ল্যান রাখাই ভালো। সিলেটে অনেক বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসি, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের ফিলিংস সহ আপনার পছন্দের একটি মেনু পাবেন। জনপ্রতি খরচ পড়বে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। আপনি চাইলে এসব রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে পারেন।

রাতারগুল এ সতর্কতা এবং টিপস

বর্ষাকাল রাত কাটানোর উপযুক্ত সময়। ভ্রমণের সময় কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ সেই সময় বন জলে পরিপূর্ণ থাকে। বর্ষাকালে বন প্লাবিত হলে বেশিরভাগ সাপ গাছের ডালে বা শুকনো অংশে আশ্রয় নেয়। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া এই মুহূর্তে জোঁকের উপদ্রবও রয়েছে। আপনি যদি সাঁতার না জানেন তবে আপনার সাথে একটি লাইফ জ্যাকেট বহন করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ছাতা সঙ্গে রাখাই ভালো। যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের সময় একটি জিনিস সবসময় মাথায় রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই স্থানীয়দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। আপনি বিশ্বের যেখানেই যান না কেন, স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী হোন।

ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে নারী-বান্ধব ট্যুর সংগঠক প্রিন্স বেল্ট থেকে এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

রাতারগুল এর অবস্থান

সিলেট জেলার ফতেহপুরের গোয়াইনঘাট মোড়ে গোয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনটি অবস্থিত। বনের দক্ষিণ পাশে আবার দুটি হাওর রয়েছে: শিমুল বিল হাওর এবং নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিমি।

রাতারগুল এর নামকরণ

মুর্তা বা পাটি গাছ সিলেটের স্থানীয় ভাষায় ‘রাতা গাছ’ নামে পরিচিত। ইঁদুর গাছের নামানুসারে এই বনের নাম রাতারগুল।

রাতারগুল এর আবহাওয়া

সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বনে প্রতি বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বনের কাছাকাছি অবস্থিত সিলেট আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৪১৬২ মিমি। জুলাই মাসে প্রায় ১২৫০ মিমি বৃষ্টিপাতের আদ্রতাপূর্ণ মাস, যেখানে বৃষ্টি ছাড়া সবচেয়ে শুষ্কতম মাস ডিসেম্বর। মে এবং অক্টোবরে গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেড়ে যায় এবং জানুয়ারিতে এটি ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এখানে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৭৪ শতাংশ এবং জুলাই-আগস্টে ৯০ শতাংশের বেশি।

সিলেট দর্শনীয় স্থান সমূহ

সিলেটে দেখার মতো অনেক জায়গা আছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের জাফলং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ ছাড়া জাফলংয়ের কাছেই সংগ্রামপুঞ্জি মায়ারী ঝর্ণা। পিয়ানি নদী পেরিয়ে ১৫ কিলোমিটার হাঁটার পরে এখানে পৌঁছানো যায়। এটি প্রধানত ভারতীয় অংশে পড়ে। তবে আপনি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারেন। দেখার মতো অন্যান্য স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া বিষ্ঠাকান্দির কাছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ও পান্থুমাই ঝর্ণা রয়েছে। সারি নদীর লালাখাল, গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের শ্বেতপাথরের ভোলাগঞ্জ। গোয়াইনঘাটে গিয়ে নাস্তা করে বিছানাও নিতে পারেন।

পরিশেষে

আশা করি আপনারা আপনাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে রাতারগুল দেশের বৃহত্তম সোয়াম্প ফরেস্ট এর অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য যাবেন। পুরো আর্টিকেল সাথে থেকে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Bangladesh

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *