আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা আলোচনা করব মহামায়া লেক নিয়ে। আশা করি শেষ পর্যন্ত সঙ্গেই থাকবেন। মহামায়া লেক চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত কৃত্রিম সৌন্দর্য হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে। মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে, ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে মহামায়া লেক এর বিস্তৃত। লেকের স্ফটিক জল ছাড়াও এই জায়গায় পাহাড়ের মাঝে একটি গুহা, কিছু প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং কিছু রাবার ড্যাম রয়েছে যা দেখতে অনেক সুন্দর।
মহামায়া লেক
ছোট বড় অসংখ্যা পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই মহামায়া লেক দেখলে বিশ্বাসই হবে না এটি কৃত্রিমভাবে গঠিত হয়েছে। একে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পার্ক, যার নাম ইকোপার্ক। নৌকা দিয়ে লেকে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি, আপনি চাইলেই নিরিবিলি স্থানে বসে বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন অনায়াসে। অবশ্য এজন্য আপনাকে বর্শি আগে থেকে নিয়ে যেতে হবে সাথে করে। পর্যটকদের দারুণ এডভেঞ্চারের স্বাদ দিতে এখানে অবস্থিত আছে কায়াকিং এর ব্যবস্থা। চারদিকে পাহাড় আর সবুজে ঘেরাও লেকের স্বচ্ছ জলে কায়াকিং এর আনন্দ নিতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকের ভিড় করে এখানে।
মহামায়া লেক এর অবস্থান
মিরসরাই উপজেলা চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মহামায়া লেক। মুহুরী নদী একে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা থেকে পৃথক করেছেন। এটিকে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারও বলা যেতে পারে। মিরসরাইয়ে ঠাকুরদিঘীর পাড়ের ঠিক উল্টোদিকের রাস্তাটি রাবার ড্যাম বলে পরিচিত। সেখান থেকে মহামায়া ইকো পার্কের গেটে সিএনসি নিয়ে যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকার মতো। অথবা আপনি হাঁটও যেতে পারেন। আপনি আশেপাশে পরিদর্শন করতে পারেন মন খুলে।
হেঁটে যেতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগবে। গেট থেকে ইকো পার্কে প্রবেশের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিটের দাম জনপ্রতি ২০ টাকা মতো। ইকো পার্কে প্রবেশ করলেই সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে নিজেকে দেখতে পাবেন এবং এক স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করবেন আপনারা। এর চারপাশে আপনি মাঝারি মাঝারি উচ্চতার পাহাড় দেখতে পাবেন। মাঝখান দিয়ে মহামায়া লেকের রাস্তা চলে গেছে। এই পথ ধরে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পর আপনি পৌঁছে যাবেন বহু প্রতীক্ষিত লেক মহামায়ার সান্নিধ্যে। মহামায়ার লেকের বৈচিত্র্য নিয়ে যতই কথা বলি না কেন, নিজের চোখে না দেখলে বোঝা সম্ভব হবে না কখনো।
শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ক্যানভাসের মতো দেখতে। চারিদিকে এত সুন্দর, স্বচ্ছ হালকা সবুজ পানি, পানিতে চারপাশের সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়, প্রতিটি দৃশ্যই অসাধারণ। সেই অনুভূতি বর্ণনা করে শেষ করার মতো না। লেকসাইডের বিশুদ্ধ, নির্মল বাতাস তাৎক্ষণিকভাবে আপনার শরীর ও মনকে সতেজ করবে তুলবে আমার বিশ্বাস। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড শুষ্ক মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, পাহাড়ি ঢাল কমানো এবং কৃষি খাতে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মহামায়া সেচ প্রকল্প চালু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালে একটি গেট বসানো হয়েছিল। এভাবেই তৈরি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া লেক। এটি একটি সেচ প্রকল্প। রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পর এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হ্রদগুলির মধ্যে অন্যতম।
কিভাবে যাবেন মিরসরাই মহামায়া লেক
ঢাকা চট্টগ্রামের যেকেনো বাসে করে সরাসরি নামতে হবে আপনাকে চট্টগ্রামের মিরসরাই সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটো রিকশা কিংবা হিউম্যান হলারে করে আসতে হবে আপনাদের মহামায়া লেক। অটোরিকশা ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০ টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের চলাচলরত হিউম্যান হলারে চড়তে পারেন, ভাড়া পড়বে মাত্র ১০ টাকা।
সিলেট থেকে চট্টগ্রাম
সিলেট থেকে সড়ক ও রেলপথ দুই ভাবেই চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। সড়কপথে গ্রীনলাইন পরিবহনের এসি ও নন এসি বাস চট্টগ্রামে যায়। এছাড়াও, আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পরের স্টেশনের উদ্দেশে যায় প্রতিদিন, শনিবার ছাড়া। আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস যায় প্রতিদিন রাত ৯:২০ টায়, রবিবার ছাড়া। মহামায়া লেকের জালালাবাদ এক্সপ্রেস মেইল ট্রেন ছাড়ে রাত ১০:৩০ টায় সপ্তাহের প্রতিটি দিনই যায় চট্টগ্রাম। ভাড়া প্রায় ১৭৫ থেকে ১২০০ টাকা।
রেলপথে চট্টগ্রাম
ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে সকল ট্রেন মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে ৯ টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকাল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকাল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টায়। রাত ১১ টা। ভাড়া প্রায় ১৬০ থেকে ১১০০ টাকা।
আকাশপথে চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ বিমান (০২-৯৫৬০১৫১-১০), GMG এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮) এবং ইউনাইটেড এয়ার (০২-৮৯৫৭৬৪০), রিজেন্ট এয়ার (০২-৮৯০৩০০৩) ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে পারে আপনারা।
চট্টগ্রাম থেকে মহামায়া লেক
চট্টগ্রাম শহরের মাদারবাড়ি এলাকা থেকে সরাসরি বাসে করে মহামায়া লেকে যেতে পারবেন আপনারা। অথবা অলঙ্কার সিটি গেট থেকে যেকোনো লোকাল বাসে যেতে পারেন, সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা। ভাড়া প্রায় ৪০ থেকে ৭০ টাকা। আর যদি আলাদাভাবে যেতে চান তবে সিএনজি রিকশা বা মিনি বাসে করে যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে ভাড়া প্রায় ১০০০ থেকে ১৪০০ হবে বলে আশা করা আমি। শহর থেকে গাড়িতে করে ঠাকুর দীঘি বাজারে নামতে হবে আপনাদের। ওখান থেকে অল্প একটু দূরে, সাথে গাড়ি থাকলে কোথায় নেই।
কোথায় থাকবেন
মহামায়া লেক এ তাঁবুতে থাকতে পারেন। তাঁবুতে থাকলে অন্য রকম একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। কিন্তু মহামায়া লেক ক্যাম্পে মেয়েদের থাকতে দেওয়া হয় না, শুধু ছেলেদের থাকতে দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও মিরসরাইয়ে থাকার মতো ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই বলেই চলে। থাকতে চাইলে মিরসরাইয়ের কাছে সীতাকুণ্ডে কিছু মানসম্মত হোটেল রয়েছে।
সীতাকুন্ড কমোডিটি মার্কেট এলাকা এ বং সীতাকুন্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল গুলো হলো কমপোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সৌদিয়া এবং সাইমন। আপনার রুম এয়ার কন্ডিশন সহ একটি ডাবল বেড ভাড়া প্রায় ১০০০ টাকা এবং এয়ার কন্ডিশনার ছাড়া প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
মহামায়া লেক এর আশেপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভ্রমণের সময় খাবার বহন করলে সুবিধা হয়। ঠাকুরদিঘি বাজারে কিছু খাবারের স্টল পাওয়া যায়। তবে ভালো মানের খাবার উপভোগ করতে আপনাকে আসতে হবে একটু দূরে বারোয়ারহাট বাজারে। এখানে আপনি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ভালো ভাবে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি সব মেনু হিসেবে পাওয়া যায়।
আসে পাশের দর্শনীয় স্থান
এছাড়াও দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান সমূহ। মহামায়া লেক ভ্রমনে, আপনি একই দিনে নিম্নলিখিত যেকোন আকর্ষণ পরিদর্শন করতে পারেন অনায়াসে। এটা আপনার সময় ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে। মহামায়ার কাছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝরনা। চাইলে সীতাকুন্ড থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত অথবা একই দিনে চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘুরে আস্তে পারবেন আপনারা। যেতে পারেন সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে যার ভিতরে রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুটি জাদুকরী ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য।
পরিশেষে
আশা করি আপনারা আপনাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে মহামায়া লেকের ঐতিহ্য দেখার জন্য ঘুরে আসবেন। প্রকৃতির এই সব অপরূপ সৌন্দর্য আসলে বলে শেষ করার মতো না। এই সব সৌন্দর্য নিজে গিয়ে উপভোগ করতে হয়। মহামায়া লেক এর অপরূপ সৌন্দর্য অনেক মুদ্ধ করেছে। বিশেষ করে সেখানে চাঁদনী রাতে তাঁবু টেনে থাকতে পারলে আরো অনেক বেশি সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। নদীর ধরে দুই পাশ দিয়ে সারি সারি অসংখ্য গাছ পালা রয়েছে যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে মহামায়া লেক এর। এই সব বলে শেষ করা যাবে না। পুরো আর্টিকেল সাথে থেকে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।