বান্দরবান l বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ, কিভাবে যাব?

বান্দরবান
বান্দরবান

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা বান্দরবান এর দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি সঙ্গেই থাকবেন। বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। আর এর বিশেষত্ব শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি জেলা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর জেলা হিসেবেও বান্দরবান অনেক জনপ্রিয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাঁড়ে এর সবুজে ঢাকা পাহাড় গুলো, উন্মত্ত জলপ্রপাত গুলো এবং ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর মানুষ গুলো। এই সব অভিজ্ঞতা গুলো পেতে হলে জানতে হবে কীভাবে এই সৌন্দর্য্য গুলোকে আলিঙ্গন করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বান্দরবান ভ্রমণের খুঁটিনাটি  বিষয় সম্পর্কে।

বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ

নীলাচল, বান্দরবান সদর

নীলাচল বান্দরবান এর প্রধান শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত করে। নীলাচলের বাইরের দিকটা ছিন্ন ভিন্ন পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা অসম্ভব প্রশান্ত। কোথাও  বিস্তীর্ণ দিগন্তের ঢালে মন খুলে ঘোরাঘুরি করার রাস্তা, কোথাও পাহাড়ি পাড়া গুলো, আর তার সঙ্গে রূপালী নদী যেন শিল্পীর আঁকা ছবি মতো অসম্ভব সুন্দর। মেঘহীন আকাশে নীলাচল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন মন খুলে পর্যটকরা।

শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে বাঁ দিকের ছোট্ট রাস্তাটি  ধরে নীলাচলের পথ। এ পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠতে হবে আপনাদের।

নীলগিরি, থানচি, বান্দরবান

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ ফুট উপরে অবস্থিত এই নীলগিরি বাংলাদেশের অন্যতম একটি উঁচু শৃঙ্গ গুলার মধ্যে। পুরো এলাকাটি সব সময় মেঘে ঢেকে থাকার কারণে দর্শনার্থীরা নীলগিরিকে মেঘের দেশ বলে থাকেন। নীলগিরির সূর্যোদয়ের মুহূর্ত গুলো আশ্চর্যজনক এবং কুয়াশাচ্ছন্ন শীতকালে এটি যেকোনো পর্যটককে চমকে দিতে পারে মুহূর্তেই। মনোরম হেলিপ্যাড নীলগিরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। পর্যটন এলাকাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত আছে সর্বদা বাংলাদেশের আর্মি ব্রিগেড।

চিম্বুক পাহাড়, থানচি, বান্দরবান

বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত করে এটি বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে যখন চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। দর্শনার্থীরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তখন তারা মেঘের ভেলা দেখে অবাক হয়ে যায়।

বান্দরবান শহর থেকে পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে থাকে। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিকাল ৪টার পর চিম্বুক–থানচি রুটে কোনো প্রকার যানবাহন চলবে না। তাই চিম্বুক পাহাড়ে যেতে হলে সেই সময়ের আগেই যেতে হবে আপনাদেরকে। সাধারণত পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলোপ্রপাট ঝর্ণা একসাথে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন।

শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, থানচি,বান্দরবান

মিলনছড়ির এই জলপ্রপাতটি থানচি থানা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শৈলপ্রপাত ঝর্ণার অত্যন্ত ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানিতে প্রচুর পাথর দেখা যায়। ঝর্ণাটি স্থানীয়দের বব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি বড় উৎস। জলপ্রপাতের বাইরে একটি বাজারও রয়েছে যেখানে পর্যটকরা পছন্দ মতো তাঁত পণ্য এবং স্থানীয় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারেন। আর এখান থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবন গভীরভাবে অবলোকন করা যায়।

বান্দরবান এর অন্যতম আকর্ষণ চিম্বুক পাহাড় এবং নীলগিরির পথের মাঝেই পড়ে শৈলপ্রপাতটি । তাই নীলগিরি ভ্রমণের গাড়ি মাঝ পথে থামিয়ে এই ঝর্ণা দেখে নেয়া যায় মনের আনন্দে।

বগা লেক, রুমা, বান্দরবান

বিস্ময়কর এই নীল পানির লেকটির সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এখানে ভীড় করেন। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে বগা লেকে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায় পর্যটকদের। শীতের মৌসুমে পর্যটকরা ক্যাম্প ফায়ার করতে পারেন, যা নিঃসন্দেহে একটি দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। আর রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত প্রায়  ১৭ কিলোমিটারের পথ। বর্ষার সময় গাড়ি সরাসরি বগা লেক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই নতুন পর্যটকদের বগা লেক পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বর্ষার সময়।

স্বর্ণ মন্দির, বান্দরবান সদর

এই বৌদ্ধ মন্দিরটির আসল নাম হলো বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, যেটি বান্দরবান এর সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি। মায়ানমারের কারিগরদের কাঠের তৈরি এই অনন্য মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি আছে। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে।

এই স্বর্ণ মন্দিরে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে যেতে হবে। আর সকালে যেতে না চাইলে দুপুর পৌনে ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেতে হবে আপনাকে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে মন্দিরটিতে প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা এর স্থাপত্য এবং চারপাশের প্রাকৃতিক অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

তিন্দু, থানচি, বান্দরবান

বাংলাদেশের নায়াগ্রা নামে পরিচিত এই তিন্দুর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু। পাহাড়,  নদী, মেঘ, জলপ্রপাত, রহস্য, রোমাঞ্চ সবই এখানে পাওয়া যায়, তাই তিন্দু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম প্রিয় আকর্ষণীয় স্থান।

বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরির পাশ দিয়ে যেতে হয়। এই দীর্ঘ পথে চারপাশের সুন্দর প্রকৃতি দেখতে দেখতে চোখ ও মন দুটোই ভোরে যায়। থানচি ঘাট থেকে ছোট  ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে মাত্র দুই ঘণ্টায় থানচি থেকে তিন্দু পৌঁছানো যায়। আর এ সময় যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর মনোমুগ্ধকর রূপের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়।

কেওক্রাডং, রুমা, বান্দরবান

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ১৭২ ফুট উঁচু এই পর্বতটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত করে। ছোট বড় পাহাড়–পর্বতের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দুর্গম এলাকাটি। কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত রয়েছে। সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শীতল ঝর্ণা, আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ি রাস্তার ধারে, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরির খেলা, এই সব কিছু মিলে মনে যে নেশা ধরিয়ে দিবে।

রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মাঝে পড়বে দার্জিলিং পাড়া নামে একটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের এলাকা। অনেক পর্যটকই যাত্রা বিরতি দিয়ে এই অপূর্ব গ্রামটিতে বিশ্রাম নিয়ে থাকে।

জাদিপাই জলপ্রপাত, রুমা, বান্দরবান

কেওক্রাডং পাহাড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের পথ পারি দিলেই জাদিপাই জলপ্রপাত পরে। তিন হাজার ৬৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বান্দরবান এর সর্বোচ্চ গ্রাম পাশিংপাড়া অতিক্রম করে জাদিপাইপাড়ার পথে উঠে গেছে খাড়া রাস্তাটি ধরে। পাশিংপাড়ার উপর থেকে জাদিপাই পাড়ার দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের কোলে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট একটি গ্রাম। বর্ষায় এই রাস্তাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। তাই বর্ষা–পরবর্তী মৌসুমে এখানে বেড়াতে আসাটা অতি উত্তম।

জাদিপাই ঝর্ণায় যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবান এর রুমা উপজেলা থেকে বগালেকে এবং তারপর কেওক্রাডং পাহাড়ের চূড়ায়। কেওক্রাডং পাহাড় থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে থাকা পাশিংপাড়ার খাড়া পথ ধরে ৪০ মিনিট হাটলেই জাদিপাই জলপ্রপাত পৌঁছানো যাবে।

নাফাখুম, রেমাক্রি, বান্দরবান

নাফাখুমের খুমের মানে হচ্ছে জলপ্রপাত আর এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটি। স্থানীয় লোকজন এটিকে রেমাক্রি জলপ্রপাতও  বলে থাকে। এখানে একবার ভ্রমণ করলে ভ্রমণকারীরা বারংবার আসতে চায়। লোকেরা একে বাংলাদেশের নায়াগ্রা জলপ্রপাত বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন।

সাঙ্গু নদী থেকে নৌকা নিয়ে রেমোক্রি হয়ে নাফাখুমে যেতে হবে। আর এই যাত্রা পথে তিন্দু, রাজাপাথর এবং পদ্মঝিরিও দেখে নেয়া যায়। বর্ষাকালে নদীতে পানির প্রবাহের অনেক বেশি চাপ থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাফাখুম যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যায় না। অপরদিকে শীতের মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে থাকায় নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় না। তদনুসারে, নাফাখুম ভ্রমণের সর্বোত্তম সময় বর্ষাকালের পরে এবং শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে মুহূর্তে।

আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ, বান্দরবান

সুড়ঙ্গ বা গুহা শব্দটা শুনলেই যেমন রহস্য মনে হয় ঠিক তেমনি আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ পুরোটা জুড়েই রয়েছে কেবল রহস্যের গন্ধ। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মাতামুহুরী ও টোয়াইন খাল  ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দু‘পাহাড়ের চূঁড়ায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ঠ এই রহস্যময় আলীর গুহাটি। এর নামকরণ নিয়ে সঠিক কোন ধারনা আমার জানা নেই। এখানে তিনটি গুহা আছে, সব গুলো দেখার জন্যে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘন্টার মত। গুহা গুলোতে যেতে হবে ঝিরি ঝিরি পথ ধরে। ঝিরি থেকে গুহামুখ গুলো উপরে অবস্থিত। প্রথম গুহায় সিড়ি দিয়ে উঠার ব্যবস্থা থাকলেও বাকি গুলোতে যেতে হবে পাহাড় বেয়ে বেয়ে। গুহার ভিতর পুরোটা অন্ধকার থাকায় ভিতরে যাওয়ার জন্যে টর্চ লাইট বা মশাল নিয়ে যেতে হবে হাতে করে। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন বা ভালোবাসেন তাদের জন্য আদর্শ একটি জায়গা এই আলীর গুহাটি। গুহায় প্রবেশের সাথে সাথেই এক অজানা জগতের দেখা মিলবে আপনাদের। এই গুহা গুলোর ভিতর ছোট বড় অনেক বাদুর রয়েছে তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই এখানে।

মিলনছড়ি, বান্দরবান

নীলগিরি ও চিম্বুক পাহাড় যাওয়ার পথেই দেখা মিলবে মিলনছড়ির সুন্দর্য।প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযে ভরপুর মেঘের রাজ্য ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে পূরণ করবে আপনাদের মিলনছড়ি। পুরো অঞ্চলটাই যেন সবুজে মোড়ানো। চারপাশটায় রয়েছে নানান গাছের সমাহার, বিশাল বাঁশ ঝাড়, অনেক রঙের ফুল আর সর্পিল গতিতে বয়ে চলা সাঙ্গু নদীটি আপনার চোখের ক্লান্তি দূর করবে এক মুহূর্তেই।

সাইরু হিল রিসোর্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্ট গুলোর মধ্যে একটি সাইরু হিল রিসোর্ট।বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-থানচি সড়কের চিম্বুক পাহাড়ের আগে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট উপরে এবং আশেপাশের পাহাড় গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পাহাড়টিতে গড়ে উঠেছে সাইরু হিল রিসোর্টটি। শীতের সময় মনে হবে কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে কেউ সাইরু হিল রিসোর্টটি। দরজা খুললেই দেখবেন এক রাশি মেঘ আপনাকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে প্রকৃতির রুপ মুগ্ধ করতে। মেঘদের সাথে বসবাস করতে চাইলে আপনাকে নির্দিধায় চলে যেতে হবে সাইরু হিল রিসোর্টটিতে। এর সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবার নয়।

ঢাকা থেকে বান্দরবান এর দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোতে যাওয়ার উপায়

প্রথমেই বান্দরবান যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি শুধুমাত্র বাস যেতে হবে। তবে চট্টগ্রামে সরাসরি যাওয়ার জন্য বিমান, ট্রেন, বাস, তিনটির যে কোনটি ব্যবহার করা যেতে পারে। অতঃপর চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসে করে সেই কাঙ্খিত বান্দরবান। এবার বান্দরবান থেকে উপরোক্ত দর্শনীয় জায়গাগুলো ভ্রমণের জন্য রয়েছে লোকাল বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, জিপ এবং চান্দের গাড়ি গুলো। এর পাশাপাশি আপনি যদি মোটরসাইকেল রাইডিং এ পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি চাইলেই যেতে পারবেন মোটরসাইকেল নিয়ে।

তিন জনের টিম হলে সাধারণত সবাই বড় গ্রুপগুলোর সঙ্গে এক সাথে হয়ে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে ভ্রমণ করে। এই গাড়িগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যায় এই রোডে। এই জায়গাগুলো ভ্রমণের একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার হচ্ছে- এ জায়গাগুলোতে গাইড অবশ্যই নিতে হবে আপনাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হয় আপনাকে। গাইডরা ভ্রমণের যান ঠিক করা থেকে শুরু করে এই অনুমতি নেয়ার যাবতীয় কাজ সমাধা করে দিয়ে থাকেন।

এছাড়া বান্দরবান এর সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ ভ্রমণে জন্য যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটি হচ্ছে- আর্মিদের চেকিংয়ের সুবিধার্তে জন্য সঙ্গে সব ধরনের পরিচয়পত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। গাইড নেয়ার সময় অবশ্যই সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত গাইড সমিতি থেকে গাইড ভাড়া করা উচিত আপনাদের। বিকাল ৪টার পর আর্মি ক্যাম্প থেকে আর অনুমতি মেলে না দর্শনার্থীদের। একই সঙ্গে যানবাহন পাওয়ারও কোনো উপায় থাকে না। তাই পুরো যাত্রাটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। বর্ষাকালে বান্দরবানকে অধিক সুন্দর দেখালেও এই সময় জায়গাগুলোর বিপজ্জনক অবস্থার কথা মাথায় রেখে আপনাদেরকে পরিকল্পনা করতে হবে হবে।

বান্দরবান এর উৎপত্তি ও ইতিহাস

বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার এর একটি বান্দরবান, বাংলাদেশের সবচেয়ে কম ঘনবসতি সম্পন্ন স্থান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি সাকাহাফং (৪৩০০ মিটার)। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গটি কেওক্রাডং (৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল রাইখিয়াং এই বান্দরবান জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের ভিতরে, বান্দরবানকে ঘিরে আছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি। অন্যদিকে রয়েছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং আরাকান প্রদেশের সীমান্ত গুলো।

বান্দরবান জেলা ৭টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে : আলিকদম, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা উপজেলা। বান্দরবান জেলার অন্যতম নদী সাঙ্গু নদী যা সাংপো বা শঙ্খ নামেও পরিচিত। এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি বাংলাদেশের একমাত্র নদী যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়ে থাকে। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী নদী দুইটি।

বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ বিশেষ। এই অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান হয়। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার স্থাপন করে। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা বান্দরবান এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা আবার পুণর্দখল করেন এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখতে সক্ষম হন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করেন। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে নয় নেন। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয় যায়। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্‌স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বান্দরবান বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। আশির দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলায়- রাঙামাটি, বান্দরবান, ও খাগড়াছড়িতে বিভক্ত করা হয়।

বান্দরবান জেলার নামকরণ

বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছেন। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর প্রজাতি। আর এই বানর গুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে নিয়ম করে লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় কারণে বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়ে যায়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ গুলো। এই সময় থেকে এই জায়গাটি পরিচিতি লাভ করে “ম্যাঅকছি ছড়া ” নামে।

অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় এই ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই অঞ্চলের নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী ভাবে রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবান এর প্রকৃত নাম হলো “রদ ক্যওচি ম্র”।

পরিশেষে

হাতে যদি কয়েকটা দিন সময় নিয়ে যান তবে দেখে আসতে পারেন চিংড়ি ঝর্ণা, নীল দিগন্ত, আমিয়াখুম জলপ্রপাত, ঋজুক ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, দামতুয়া ঝর্ণা, মারায়ন তং, শৈলপ্রপাত ঝর্ণা গুলো। পাহাড়ি কন্যা বান্দরবান সারা বছরই তার অপার সৌন্দর্যে ভরপুর থাকেন। বান্দরবান দেখে আপনি প্রকৃতির প্রেমে পরতে বাধ্য হবেন আর কর্মব্যস্ত এই জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে বারবার ফিরে যাবেন তার কাছে। আশা করি আপনারা আপনাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে বান্দরবান এর এই ওপার সৌন্দর্য  দেখার জন্য যাবেন। পুরো আর্টিকেল সাথে থেকে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Bangladesh

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *