আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন। দুপাশে যত দূর চোখ যায় কেবল মানুষ আর মানুষের সমাগম। তাঁদের কোলাহলে ছাপিয়ে যাচ্ছিল ঢেউয়ের গর্জন। কেউ বা ব্যস্ত সুসজ্জিত বাগানের বিভিন্ন ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। কেউ বা বসার আসনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আয়েশে করে। অনেকেই আবার হাঁটাপথ ধরে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন মনের সুখে। অনেকে আবার একটু নিচে নেমে সমুদ্রের বালুচরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন মনের সুখে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম জেলায় অসংখ্য ভ্রমণ স্থান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই স্থানটি। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবন্থান করে।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। প্রিয়জনকে নিয়ে যারা একদিনের ট্যুরে ঘুরতে যেতে চান, তাদের জন্য সেরা হতে পারে এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর চারপাশে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্র পাড়ের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা খেলা করে। সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ-শোঁ শব্দ মন প্রাণ ভরিয়ে দেবে আপনার। দেখতে পাবেন নানান বয়সী মানুষ কতই না আনন্দ করছে এই সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্র সৈকত জুড়ে চারকোণা বিশিষ্ট কংক্রিটের ব্লক গুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এতে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষতি হয় সমুদ্র সৈকতের। বর্তমানে বাঁধ দিয়ে রক্ষাণাবেক্ষণ করায় সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় যেন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে থাকে। আর সে বাঁধের উপর সবুজ ঘাস দেখলে মনে হবে যেন সবুজের কার্পেট বসানো হয়েছে। জোয়ারের সময় সিসি ব্লকের ওপর আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে থাকে। এত সব মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত টি অন্যান্য সৈকত থেকে খানিকটা আলাদা।
কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যারা যাননি কিংবা সময়ের অভাবে দেখার সুযোগ হয়নি, তাদের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে পারে সবচেয়ে ভালো বিকল্প উপায়। এরই মধ্যে এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকেল হতে না হতেই হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর পারে। সেখানকার পরিবেশ এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল শব্দ। সাগড় পাড়ে দাঁড়ালেই পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে নীল জলরাশির অপার ঢেউ, দেখা মিলবে বিশ্বের নানান দেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ গুলো। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর পাশে ও ঝাউ বনে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। পতেঙ্গা সমুদ্রে ভালো সময় কাটানোর জন্য আছে স্পিডবোট, সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে সি বাইক ও ঘোড়া। ঝাউবন ঘেঁষে উত্তর দিকে একটু সামনেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলি নদীর মোহনা স্থান।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য
বিকেলে সূর্যাস্তের দৃশ্য না দেখলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর আসল দৃশ্য দেখা মিস করবেন। সূর্যাস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন, সূর্য সাগরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। এমন লাল রং ধারণ করে সূর্য তখন অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়ে যায়। তা দেখে মুহূর্তে আপনার মন জুড়ে যাবে। আবার সকালে যখন সূর্য উদয় হয়, তখন মনে হবে সাগর থেকে যেনো সূর্য উঠে আসতেছে। কি ঠান্ডা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। যা নিজ চোখে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘুরতে সাবধানতা
সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো আপত্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে দল বেধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। আর অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকে অবস্থান করাই ভালো। সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন আগে দেখে শুনে ভাড়া শুনে নিলে ভালো হয় আপনার পক্ষে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কীভাবে যাবেন?
আবার যারা ঢাকা বা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসবেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখতে তারা প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে চলে যাওয়া ভালো হবে। তারপর চট্টগ্রাম শহরের এ.কে. খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ।
- চট্টগ্রাম শহর থেকে অটো রিকশায় করে যেতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক। ভাড়া পড়বে প্রায় ২৫০ টাকার মতো। আর বাসে যেতে চাইলে তো কোনো কথাই নেই, বহদ্দার হাট, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট, চক বাজার মোড় থেকে সরাসরি বাস পেয়ে যাবেন। বাসের গায়ে লেখা থাকবে সি বিচ। তারপরে আপনাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ পৌঁছে যাবেন।
- যারা চট্টগ্রামে বসবাসকারী তাদেরকে নতুন করে যাবার উপায় বলার দরকার নেই। সড়ক পথে যেতে চাইলে অলংকার মোড় এ.কে খান হয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে।
- তাছাড়া সি বিচ লেখা বাস গুলোতে চেপে বসলেই নিয়ে যাবে। আর যদি নগরীর জিইসি মোড় থেকে যেতে চান তবে প্রায় ১৮০ -২০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যেতে পারবেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।
- অন্যদিকে ট্রেনে বা রেলপথে কেউ চট্টগ্রাম আসতে হলে তাকে ট্রেনে ঢাকা -চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতি ঢাকা থেকে রওনা দেয় সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস রওনা দেয় সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা থেকে রওনা দেয় বিকেল ৩ টায়, আর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রওনা দেয় বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা থেকে রওনা দেয় রাত ১১ টায়। ভাড়া প্রায় ১৬০ -১১০০ টাকা। আর যদি কেউ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ রাত্রিযাপন করতে চান তাহলে বেশ কিছু উন্নত মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আবাসিক হোটেলগুলো ভাড়া নিয়ে রাত কাটাতে পারেন আপনারা।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এ কোথায় রাত্রি যাপন করবেন
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর কাছেই থাকার জন্য মনোরম জায়গা বাটারফ্লাই পার্ক রেস্ট হাউস। ভাড়া প্রায় চার হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। ফোন- ০১১৯৫০১০৫০০, ০১১৯৫০১০৬০১। তবে চট্টগ্রামের কোনো হোটেল থেকেও আপনি আস্তে পারবেন।
এছাড়া চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল রয়েছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলের নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল। আশা করি একটু হলেও উপকৃত হবেন।
- হোটেল প্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। আমাদের মতে বাজেটের সেরা হোটেল এটি। অনেক সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও কম থাকে)। রুমগুলোও ভালো মানের। ভাড়া নন এসি সিঙ্গেল প্রায় ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি প্রায় ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ– ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
- হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন্ হোটেল। ভাড়া নন এসি সিঙ্গেল: প্রায় ১০০০ টাকা। এসি : প্রায় ১৭২৫ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ– ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
- হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল মধ্যে একটি। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা আপনার। ভাড়া : প্রায় ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এসি প্রায় ১৩০০ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ-০৩১-০৬১৪০০৪
- হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল মধ্যে। তবে যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ এটি। ভাড়া : প্রায় ২৫০০/৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ– ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
- হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল। ভাড়া- প্রায় ২৩০০/৩৪০০ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭
পরিশেষে
আশা করি ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরে আসার বা একাকিত্ব কাটিয়ে তোলার মতো একটি অপরূপ সুন্দর্যের জায়গা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এর অপরূপ জায়গায় ভ্রমণ করে আপনারা নিরাশ হবেন না। আমাদের সাথে থেকে পুরো আর্টিকেল পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাদেরকে।