দেবতাখুম l দেবতাখুম রোয়াংছড়ি বান্দরবান

দেবতাখুম

দেবতাখুম (Debotakhum) বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। খুম মানে জলাধার। দেবতাখুম মূলত তারাচা খালের একটি অংশ। দুপাশে পাহাড়ে ঘেরা এবং গভীর জলের পাথুরে এলাকা।

বান্দরবানে ছোট-বড় অনেক খুম আছে। থানচির অমিয়াখুম, ভেলাখুম ইত্যাদির মতো। তবে বান্দরবানের সব খুমের মধ্যে দেবতাখুম সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর কারণ হল এই জায়গা থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসা যায়। স্থানীয়দের মতে, এই খুমের কিছু অংশ প্রায় ৫০- ৫৫ ফুট গভীর।

এই খুমের দুই পাশে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল। উঁচু পাহাড়ের কারণে, সরাসরি সূর্যের আলো খুমের ভিতরে পৌঁছায় না, তাই আপনি যতই খুমে যান ততই শীতল অনুভূত হয়। জায়গাটি খুব শান্ত এবং কোলাহল মুক্ত। বাঁশের ভেলায় এই খুমের ভিতরে যাওয়ার সময় এটি পর্যটকদের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়। এর পানিও খুব স্বচ্ছ।

কিভাবে দেবতাখুম যাবেন

দেবতাকুম যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ৬০০ ভাড়া  থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২২০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে। বহদ্দারহাট থেকে ৩৫ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২৩০ টাকা।

কখন যাবেন

দেবতাখুম সবসময় যাওয়া যায়। একেক সময় এর একেক রূপ। বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেশি থাকে আর শীত কালে কমে যায়। বর্ষায় পানি বেশি থাকে বলে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য এবং পানির রং স্বচ্ছ থাকেনা। এছাড়া বর্ষায় ফ্লাশ ফ্লাডের আশংখা থাকে। সেই জন্যে সবচেয়ে ভালো বর্ষা পরবর্তী সময়ে যাওয়া। দেবতাখুম সহ বান্দরবানের যে কোন খুম দেখতে যাওয়ার আদর্শ সময় হলো নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস।

বান্দরবান থেকে কচ্ছপতলী

বান্দরবান থেকে দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্পে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ির দূরত্ব ২১ কিঃমিঃ। রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী ৫/৬ কিঃমিঃ। প্রথমে বাসে করে রোয়াংছড়ি, পরে ওখান থেকে সিএনজি নিয়ে কচ্ছপতলী যাওয়া যায়। বান্দরবান থেকে প্রতি ঘন্টায় রোয়াংছড়ির বাস ছাড়ে, ভাড়া ৭০ টাকা। আর রোয়াছড়ি থেকে কচ্ছপতলীর সিএনজি ভাড়া ১৬০ টাকার মতো। এছাড়া আপনি চাইলে বান্দরবান শহর থেকে সরাসরি জিপেও কচ্ছপতলী চলে যেতে পারেন। জিপ ভাড়া ১৮০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন।

কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম

কচ্ছপতলীতে প্রথম কাজ হবে ওখানকার আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করা। সেখানে সবার জাতীয় পরিচয় পত্র বা অন্যকোনো ফটোআইডির ফটোকপি জমা দিয়ে পারমিশন নিতে হবে। ফটোকপি ঢাকা থেকেই করে নিবেন। যেহেতু ওখানে ফটোকপি করার কোনো দোকান পাওয়া যাবেনা। এরপর আর্মিকে বললে তারা গাইড ঠিক করে দিবে। আপনি চাইলে নিজেও গাইড ঠিক করতে পারবেন। গাইড ফি ৫০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

দেবতাখুম এর আশেপাশে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। দুপুরের খাবারের জন্যে কচ্ছপতলী বাজারে আগেই অর্ডার করে যেতে হবে। এই ক্ষেত্রে যাবার সময় কতজন খাবেন, কি দিয়ে খাবেন তা বলে গেলে ফিরে আসার পথে খেয়ে নিতে পারবেন। আপনার গাইড এই ব্যাপারে সহায়তা করবে। ট্রেকিং এর সময় কিছু শুখনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন সাথে করে।

কোথায় থাকবেন

সকালে বান্দরবান থেকে দেবতাখুম এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সন্ধ্যার মধ্যেই আবার বান্দরবান শহরে এসে পৌঁছাতে পারবেন। বান্দরবান শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। হোটেল হিল ভিউ, হোটেল প্লাজা বান্দরবান, হোটেল হিল্টন, হোটেল নাইট হেভেন। হোটেল ও রুমের মান ভেদে প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ১২০০-৫৫০০ টাকা পর্যন্ত। পিক সিজনে ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে পছন্দের হোটেল রিসোর্ট বুকিং করে রাখলে ভালো হবে।

বান্দরবানের কয়েকটি হোটেল

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের মূল বাস স্ট্যান্ডের পাশেই এই হোটেলটি। মোটামুটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১৩০০ থেকে ২৭০০ টাকা।

হোটেল প্লাজা: এটিও বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।

রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।

পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

ভ্রমণ তথ্য ওসতর্কতা

  • কচ্ছপতলীতে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করাতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্য কোনো ফটো আইডির ফটোকপি লাগবে। তারপরই দেবতাখুমে ঢুকতে পারবেন।
  • কচ্ছপতলীর পর থেকে ফোনে নেটওয়ার্ক পাবেন না।
  • ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • ভেলায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।
  • সাতার না জানলে অবশ্যই পানিতে নামবেন না।
  • পানির নিচে বিশাল বিশাল পাথর আছে, সাবধানে থাকবেন।
  • দেবতাখুম বা শীলবান্ধা পাড়ায় ক্যাম্পিং করতে পারবেন না।

শেষ কথা

আপনারা যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখেছেন। তারা যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন। তাহলে অবশ্যই অন্যকেও এখান থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিবেন। ধন্যবাদ!

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *