কাঞ্চনজঙ্ঘা l কাঞ্চনজঙ্ঘা কোথায় অবস্থিত, কিভাবে যাবেন?

কাঞ্চনজঙ্ঘা
কাঞ্চনজঙ্ঘা

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আলোচনা করবো কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে। আশা করি সঙ্গেই থাকবেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। হেমন্ত ভারতের সিকিম ও নেপালে অবস্থিত হলেও প্রায় প্রতিদিন সকালে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যায়। সকালের আলোয় তুষার-ঢাকা শৃঙ্গগুলো সোনালি বর্ণ ধারণ করে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দিনের অন্য সময়েও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।

এই মুহূর্তে, প্রকৃতিপ্রেমীরা তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এর আকৃতি দেখার জন্য আড্ডা দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরাও সেখানে আসেন। তেঁতুলিয়া থেকেও ঘুরে আসতে পারেন এই সৌন্দর্য।

কাঞ্চনজঙ্ঘা

বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে ভারতের সিকিম ও নেপালের সীমান্তে এর মহিমান্বিত চূড়া অবস্থিত। শীতের শুরুতে যখন আকাশ মেঘ ও কুয়াশা পরিস্কার থাকে তখন ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে খালি চোখে দেখা যায় এই পাহাড় চূড়া। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই পর্যটকে ভরে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্থানটি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অবর্ণনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে সব বয়সের মানুষ ছুটে আসেন উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। বিশাল চা বাগানের সবুজ গালিচায় সোনালী আলোয় এর প্রাকৃতিক রূপ ফুটে ওঠে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা সাধারণত ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে দেখা যায়। এবং সকাল ৬:৩০ টার সময় আমাদের চোখের সামনে পাহাড় ভেসে উঠল। সূর্য মাটিতে আঘাত করার কয়েক মিনিট আগে, যখন ভোরের প্রথম রশ্মি কাঞ্চনজঙ্ঘা এর শিখরে স্পর্শ করে, তখন সাদা পাহাড়টি উত্তপ্ত লাভার মতো লাল হয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়া ছাড়াও, তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকা থেকে আপনি ভারতের কালিম্পং, দার্জিলিং সাব-ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারের ট্রাফিক এবং বৈদ্যুতিক আলো এবং রাতে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর নজরদারি বাতি উপভোগ করতে পারেন। ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে মেঘের মাঝে একটি বিরল সূর্যাস্ত আরেকটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। রাতে মহানন্দা নদীর তীরে বসে এ দৃশ্য দেখতে পান পর্যটকরা। দেখার মতো অন্যান্য স্থানের মধ্যে রয়েছে ভিতরগড় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, পঞ্চগড় সদর শিলা জাদুঘর, বোদা উপজেলার বোদেশ্বরী মন্দির, মির্জাপুর শাহী মসজিদ এবং আটোয়ারী উপজেলার ইমামবাড়া মসজিদ।

পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্থানীয়রা বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যবসায় নিয়োজিতরা নতুন নতুন সেবা ও সুযোগ-সুবিধা চালু করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। পঞ্চগড়ের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের মতে, পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

কোথা থেকে দেখবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো মহানন্দার তীরে অবস্থিত। অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসের বেশিরভাগ সময় আপনি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারেন। এছাড়া পঞ্চগড় জেলা শহরের কাছে করতোয়া ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে বা শহরের কোনো উঁচু ভবনের ওপর দাঁড়ালে পরিষ্কার উত্তর আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে কখনো সামনের রাস্তা থেকে কখনো ডানে কখনো বামে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

পঞ্চগড়ে আর কী কী দেখা যায়?

পর্যটকরা পঞ্চগড়ে আসেন শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে নয়, শীতের হাওয়া অনুভব করতেও। শীতের আবহাওয়ায় পঞ্চগড়ের আরো কিছু ঐতিহাসিক ও পর্যটন স্থান ঘুরে দেখতে পারেন।

  • বাংলাদেশ ও ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য বাংলাবান্ধা একটি সম্ভাব্য স্থলবন্দর। তেঁতুলিয়া গেলে সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
  • তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতে নুড়ি পরিবহন আপনার ভ্রমণের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে।
  • দেশের একমাত্র চা বাগান পঞ্চগড় জেলায়। চা বাগান ঘুরে একদিন কাটাতে পারেন।
  • পঞ্চগড়ের অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে মুঘল কাঠামোর মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় গেলে দেখা যাবে।
  • আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে বার আউলিয়ার মাজার রয়েছে। সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
  • পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী মোড়ে সতীর পায়ের পাতাসহ বোদেশ্বরী মন্দির রয়েছে। আপনি এই মন্দিরের প্রাঙ্গনেও প্রবেশ করতে পারেন।
  • দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন মন্দিরের নাম গোলকধাম। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি তালিকাভুক্ত ভবন। মন্দিরটি শালডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত।
  • পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তবর্তী ভিটগড় এলাকায় মহারাজার একটি ১৫০০ বছরের পুরনো দীঘি রয়েছে। এ ছাড়া একটি শক্তিশালী রয়েছে।
  • পঞ্চগড়ে আপনি দেশের একমাত্র পাথর জাদুঘর, ‘রক মিউজিয়াম’ পরিদর্শন করতে পারেন। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ক্যাম্পাসে একটি দোতলা ভবনে জাদুঘরটি।

কিভাবে যাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সড়কপথে এসি ও নন-এসি বাসে পঞ্চগড় যাওয়া যায়। অধিকাংশ বাসেরই শেষ গন্তব্য তেঁতুলিয়া। ট্রেনেও পঞ্চগড় যাওয়া যায়। ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, হিত্যান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস চলাচল করে। পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে চলাচল করে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস। এছাড়া পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থেকেও আকাশপথে যাওয়া যায়। সেখান থেকে সড়কপথে পঞ্চগড় পৌঁছাতে হবে। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলায় বাস বা অন্য যানবাহনে যাওয়া খুবই সহজ।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কোথায় অবস্থান করবেন

পঞ্চগড় জেলা শহরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মহাসড়ক ও পৌরসভা বিভাগের গেস্ট হাউসসহ সার্কিট হাউস রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে পঞ্চগড়ে সেন্ট্রাল গেস্টহাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রীতম, অগ্রদূত প্যালেস, এইচকে প্যালেস, ধানসিন্ডিসহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।

তেঁতুলিয়ায় সরকারি-বেসরকারি হোটেল ও বাংলো রয়েছে। মহানন্দা নদীর পাশে একটি উঁচু পাহাড়ের ওপর শতবর্ষী পুরনো তাঁতুলিয়া ডাকবাংলো। ব্রিটিশ আমলের এই ডাকবাংলো এখন জেলা পরিষদ ডাক বাংলো নামে পরিচিত। আপনি আগে থেকে যোগাযোগ করে ডাকের এই বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুলিশ অফিসার মেস, উপজেলা পরিষদ বেরং কমপ্লেক্স, রোড এন্ড টাউনশিপ গেস্ট হাউস, এডুকেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট গেস্ট হাউস, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট গেস্ট হাউস এবং পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও তেঁতুলিয়ায় হোটেল দোয়াল, স্কয়ার হোটেল, স্বপ্ন গেস্ট হাউস, দাওয়া বাড়ি গেস্ট হাউস, হোটেল শিমন্দর পাড়, হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাজী ব্রাদার্স এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও পরিচালিত মহানন্দা কটেজ সহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

দার্জিলিং

শীতের মরশুমের ভিড় বাড়বে শৈলশহরে। মেঘমুক্ত, ঝকঝকে আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ রয়েছে একমাত্র শীতকালে। কথায় বলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা সবাইকে দেখা দেয় না। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা যতই অসহ্যকর হোক, শীতকাল দার্জিলিং গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর দেখা মিলবেই।

দার্জিলিং ঘুরতে গেলে এ বার থেকে কর দিতে হবে। করের অঙ্ক মাত্র ২০ টাকা। এই টাকা শহরের জঞ্জাল পরিষ্কারে খরচ করবে পৌরসভা। তবে, এতে পর্যটকদের ভিড় কমবে না দার্জিলিং। বরং, শীতের মরশুমের ভিড় বাড়বে শৈলশহরে। মেঘমুক্ত, ঝকঝকে আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ রয়েছে একমাত্র শীতকালে। কথায় বলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা সবাইকে দেখা দেয় না। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা যতই অসহ্যকর হোক, শীতকাল দার্জিলিং গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর দেখা মিলবেই। কিন্তু দার্জিলিংয়ের মতো ঘিঞ্জি শহরে যেতে নারাজ বাঙালির একাংশ। তাহলে কোথায় গেলে দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা, রইল ৫ জায়গার খোঁজ।

চারখোল

কাঞ্চনজঙ্ঘার ১৮০ ডিগ্রি ভিউ দেখতে চান? আপনাকে চারখোল যেতেই হবে। রেলি নদীর অববাহিকায় সামালবং অঞ্চলের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম চারখোল। ছোট্ট হলেও এই পাহাড়ি গ্রাম থেকে দেখা মেলে তুষারবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রায় ৫,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চারখোল ঢাকা পাইন, সাইপ্রাস, ওক, শাক, গুরাসে। ন্যাওড়াভ্যালি ন্যাশানাল পার্কের কোলে অবস্থিত চারখোল। এখানে বসে আপনিও দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা কে। কালিম্পং থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চারখোল।

ডেলো

কালিম্পংয়ের কাছে অবস্থিত জনপ্রিয় ডেলো পার্ক। যাঁরা কার্শি‌য়াংয়ের টানে বারবার ছুটে যান দার্জিলিংয়ে, তাঁদের কাছে এই ডেস্টিনেশন খুব একটা অপরিচিত নয়। কিন্তু ডেলোর কোলে যে কোনও রিসর্ট বা হোম-স্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আপনি তুষারবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। বছরের অন্যান্য সময় এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু শীতকালে দেখতে পাবেনই।

সান্দাকফু

অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে যদি থাকেন, যেতে পারেন সান্দাকফু। তুষারপাতকে সঙ্গে নিয়ে শীতকালে ট্রেক করতে পারেন সান্দাকফু। সান্দাকফু যাওয়ার পথে টোংলু, ধোরতে মতো পাহাড়ি গ্রাম থেকে আপনি বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। আর সান্দাকফু পৌঁছানোর পরও দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ মাউন্ট এভারেস্ট, মাকালু ও লোৎসের শৃঙ্গ।

বাতাসিয়া লুপ

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া এখন এতটাই ভাল যে, গজলডোবা, শিলিগুড়ি শহর থেকেও দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর । শীতকালে দার্জি‌লিংয়ের মল রোড থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ঘুম থেকে টয় ট্রেনে চেপে দার্জিলিং যেতে গেলে মাঝে পড়ে বাতাসিয়া লুপ। ১৯১৯ সালে বাতাসিয়া লুপ গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন যুদ্ধে নিহত গোর্খা শহীদ বীর সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে উদ্ব‌োধন করা হয় বাতাসিয়া লুপ। এই বাতাসিয়া লুপ থেকে দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ৩৬০ ডিগ্রিতে দেখা যায়। পাশাপাশি দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

Bangladesh

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *