কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান l কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান কি কি?

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। যা আমাদের কাছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হিসাবে পরিচিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। এই সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। Cox’s Bazar Sea Beach শুধু দীর্ঘতম সৈকতই নয়, এই পুরো সৈকত জুড়ে কোয়ায় আপনি কাদার অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। কারন পুরোটা সৈকত বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ অবিভক্ত সমুদ্র সৈকতটি তার জোয়ার-ভাটা এবং সুন্দর সূর্যের সাথে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যটককেই মুগ্ধ করে। প্রতিবছর লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক এই সৈকত পরিদর্শনে আসেন। সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য, ঝাউবনের সারি, নীল সমুদ্র, ঝিনুকের মালা, নানারকম সামুদ্রিক খাবার, ঐতিহ্যবাহী বার্মিজবাজার, ওয়াটার স্পোর্টস ইত্যাদি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলে আমরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য, কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানবো। চলুন শুরু করা যাক।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান সমূহ

ভ্রমণের জন্য সেরা একটি স্থান হলো কক্সবাজার। বিভিন্ন প্রকার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে রয়েছে মেরিন ড্রাইভ, লাবনী বিচ, ইনানী বিচ, হিমছড়ি, সোনাদিয়া দ্বীপ, রামু ডুলা হাজারা সাফারি পার্ক টেকনাফ সেন্টমার্টিন সহ বিভিন্ন দ্বীপ।

এছাড়াও রয়েছে কুদুম গুহা, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, শামলাপুর সমুদ্র সৈকত, রাবার বাগান, মারমেড ইকো রিসোর্ট, শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ ইত্যাদি। চলুন কক্সবাজার ভ্রমণ এর কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেই।

ইনানী সমুদ্র সৈকত – কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান গুলোর ভিতরে ইনানী সমুদ্র সৈকত (Inani Samudro Soikot) অন্যতম।ইনানী সমুদ্র সৈকত এর দুরত্ব কক্সবাজার থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার।এবং হিমছড়ি থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকতের দুরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার।কক্সবাজার থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত যেতে আপনার প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগবে।

অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই ইনানী সমুদ্র সৈকত।আপনি যখন টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকতে যাবেন তখন দেখবেন একপাশে উচু উচু পাহাড় আর আরেকপাশে উত্তাল সমুদ্রের।যা আপনার দুচোখ জুড়িয়ে দিবে।রাস্তায় আরো দেখবেন সারি সারি ঝাউবাগান।এখানকার প্রধান আকর্ষণ প্রবাল এবং পাথর।আবার ইনানী সমুদ্র সৈকতের পানি এতটায় পরিষ্কার যে আপনার পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে মন চাইবে।

কক্সবাজার গেলে অবশ্যই ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে একবার ঘুরে আসবেন।আপনি চাইলে আসার পথে হিমছড়ি দেখে আসতে পারবেন।

হিমছড়ি, কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার যারা গিয়েছেন কিন্তু হিমছড়ি যাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কারণ কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত হিমছড়ি। এখানে হিমছড়ির ছোট বড় ঝর্ণা পাহাড় আর ফটোগ্রাফিক সমুদ্রতর পর্যটকদের মনে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে এই পরিবেশ কে। শীতল পানির ঝরনা ও মেরিন ড্রাইভ রোড মানুষের মনে আরো আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনারা চাইলে বছরের যে কোন সময় হিমছড়ির ভ্রমণ করতে পারবেন।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা হতে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল দ্বীপ। নাফ আপনাদের মোহনায় এই আকর্ষণীয় দ্বীপের অবস্থান। বর্তমানে একে দারুচিনি দ্বীপ নামেও বলে থাকেন স্থানীয়রা।

সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে রয়েছে স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং এর মতো অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ। রাতে সেন্ট মার্টিনের দ্বীপে চলাফেরা করা আপনাকে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করবে। কক্সবাজার ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই সেন্ট মার্টিনের স্বাদ নেওয়া উচিত।

মহেশখালী দ্বীপ, কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সাগরের বুকে একটি পাহাড়ি দ্বীপ হলো মহেশখালী দ্বীপ। মহেশখালী উপজেলায় রয়েছে তিনটি বড় বড় দ্বীপ। সোনাদিয়া দ্বীপ, মাতারবাড়ি দ্বীপ ও ধলঘাটা দ্বীপ। মহেশখালী দ্বীপের মূল আকর্ষণ মিষ্টি পান, সারা দেশ জুড়েই রয়েছে এর ক্ষেতি। কক্সবাজারের প্রায় ৩৬২ কিলোমিটার এলাকার এই দীপ্তিতে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।

মহেশখালীর অদিনাথ মন্দির, অদিনাথ মেলা, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইনপাড়া, স্বর্ণমন্দির ও মৈনাক পর্বত সহ আরো বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। তাই আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ এ এই অংশটি অবশ্যই রাখতে পারেন।

মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

মেরিন ড্রাইভ হল একটি ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা যা কক্সবাজারের উপকূল বরাবর চলে। রাস্তাটি বঙ্গোপসাগরের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখায় এবং এটি হাঁটা, জগিং এবং সাইকেল চালানোর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

কক্সবাজার জেলার অনেক পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে এগুলি কয়েকটি মাত্র। জেলাটি সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য এবং প্রত্যেকের জন্য কিছু অফার করে।

কক্সবাজার জেলার পার্ক সমূহ

কক্সবাজার জেলায় বেশ কিছু পার্ক রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় পার্কের মধ্যে রয়েছে:

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান: কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। এটি প্রায় ১,৭২৯ হেক্টর এলাকা জুড়ে এবং বাঘ, হাতি, হরিণ এবং বানর সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক: কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় এই পার্কটি অবস্থিত। এটি প্রায় ২,২২৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে এবং সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক এবং বানর সহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল।

সাবরাং পর্যটন পার্ক: এই পার্কটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রায় ১০২৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন গাছপালা এবং প্রাণীর আবাসস্থল।

এই পার্কগুলি দর্শনার্থীদের জন্য হাইকিং, ক্যাম্পিং, সাঁতার কাটা এবং মাছ ধরা সহ বিভিন্ন ধরণের ক্রিয়াকলাপ অফার করে। কক্সবাজার জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে জানার জন্যও এগুলি একটি দুর্দান্ত জায়গা।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়

অনেকেই আছেন যারা সিজনাল সময়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চান। আমার মতে কক্সবাজার ভ্রমণের সবচাইতে দারুন সময় হচ্ছে শীতের শুরুতেই অর্থাৎ আপনি বছরের অক্টোবর মাসের থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেন। কারণ এই সময় কক্সবাজারে বড় সকল জাহাজ ও শীপ চালু হয়ে থাকে। যেখানে কক্সবাজার গিয়ে আপনি খুব সহজেই সেখান থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেলওয়ে ও বিমানের মাধ্যমে কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার গামী বিভিন্ন বাস রয়েছে যাদের মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ ব্রেঞ্জ, গ্রীন লাইন হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস আলম পরিবহন মর্ডান লাইন ইত্যাদি বাস উল্লেখযোগ্য। যেখানে বাসগুলোর শ্রেণী বেদে প্রতি সিটের ভাড়া ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার কোন ট্রেন এখনো চালু হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ট্রেন চালু হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আপনাকে ট্রেনের মাধ্যমে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য যেসব আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে তাদের মধ্যে হচ্ছে সোনার বাংলা সুবর্ণ এক্সপ্রেস তিরনা নিশীথা মহানগর প্রভাতী গোধূলি ও চটলা মেইল ট্রেনে যাতায়াত করা যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এরিয়া থেকে দামপাড়া বাস স্ট্যান্ডে বাস পাবেন সেখানে। সেখানেও একেক গাছে একেকরকম ভাড়া নিবে অর্থাৎ ৩৮০ থেকে ৫৫০ টাকা। অন্যদিকে আপনি যদি চান তাহলে খুব সহজেই চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে কক্সবাজার যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ বিমান সহ নভোএয়ার ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেখানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৪,৫৯৯ থেকে ১২০০০ টাকা।

কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে কোথায় থাকবেন

পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় কক্সবাজারে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং বিভিন্ন ছোট বড় হোটেল। কক্সবাজারের হোটেল গুলোতে রয়েছে প্রায় ১,৫০,০০০ জন মানুষের ধারণক্ষমতা। ভাড়া অনুসারে কক্সবাজারের হোটেল/ রিসোর্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

৮০০-৩০০০ টাকা- ইকরা বিচ রিসোর্ট, কল্লোল, মিডিয়া ইন, হানিমুন রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, কোরাল রীফ, অভিসার, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি।

প্রায় ৩০০০-৬০০০ টাকা- আইল্যান্ডিয়া, সি গাল, সি প্যালেস, নিটোল রিসোর্ট, বিচ ভিউ, হোটেল সি ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি।

প্রায় ৬০০০-১০০০০ টাকা- সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইস, লং বিচ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, হেরিটেজ, কক্স টুডে ইত্যাদি।

এছাড়াও কম মূল্যে হোটেল পেতে কক্সবাজার ভ্রমণ এর সমুদ্র সৈকত ও মেইন রোড থেকে ভেতরের গলি গুলোতে সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করতে পারেন।

পরিবারের সাথে কক্সবাজার যেতে চাইলে দুই থেকে তিন বেডরুম সহ ফ্লাট ভাড়া নিতে পারবেন কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রতিদিনের প্রায় ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে।

শেষ কথা

কক্সবাজার বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সেরা। আপনিও কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যেতে চাইলে পূর্বেই জেনে নিন কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান এর আলোচনা সম্পর্কিত কোন তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানান, ধন্যবাদ।

Bangladesh

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *