খৈয়াছড়া ঝর্ণা l খৈয়াছড়া ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত?

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা আলোচনা করবো খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাত নিয়ে। আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন। খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাত বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাই পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মিরসরাইয়ের এই ৯ ধাপের ঝর্ণাটি আশ্চর্যজনক। খৈয়াছড়া ঝর্ণা নিঃসন্দেহে আকার ও গঠনের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি। এর ৯ টি প্রধান ধাপ এবং অনেকগুলি বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে এর আগে আর কোন অনুরূপ ঝর্ণা দেখা যায়নি। খৈয়াছড়া ঝর্ণা একটা পাহাড় আছে যেটা সব সময় জ্বলে (এমনকি বৃষ্টি হলেও) আগুন কখনো নিভে না। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ দেশটির পর্যটকরা। রাতে চাঁদের আলোয় ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু ঝুলিয়েছেন। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানীর রূপের আগুন, যেখানে প্রকৃতি তাদের মনে খুলে খেলা করে, সেখানে মানুষ ঘুমের শব্দে বয়ে যাওয়া ঝর্ণায় ডুব দিয়ে যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে নিজেকে ধুয়ে নেয় অনায়েসে। তাই ‘খৈয়াছড়া ঝর্ণা’কে বাংলাদেশে ‘ঝর্ণা রানী’ বলা হয়।

স্থানটি মিরসরাই ঠাকুরদা দীঘিতে পড়ে। গ্রামের সবুজে আঁকা আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে শরীরটা অন্তত একটু ভিজতে পারে, সন্দেহ নেই তাতে। মিরসরাইয়ে নয়তলা বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে ভিড় করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে আসেন সেখানে। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থানের কারণে একে খৈয়াছড়া ঝর্ণা বলা হয়। মিরসরাই উপজেলার বারতাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে খৈয়াছড়া ঝর্ণা অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার গাড়িতে এবং বাকিটা পায়ে হেঁটে, বাঁশের ঝুলি, দেশের রাস্তা, ঘুরতে থাকা পাহাড়ি পথ, চরাঞ্চল, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন পর্যটক ঝরনার স্বচ্ছ জলে ভিজে যাবে, তখন মনে হবে পথের এই দূরত্ব খুবই কম। ছুটির দিনে, পর্যটকরা সবুজ পাহাড় এবং ঝর্ণা পরিদর্শন করে যেখানে প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি পাওয়া যায়। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে এক হয়ে গেছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা। প্রকৃতির আঁকা এই সুন্দর চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাতের অবস্থান ও নামের কারণ

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ঝর্ণাগুলোর মধ্যে খৈয়াছড়া ঝর্ণা সবচেয়ে জনপ্রিয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খৈয়াছড়া অংশে বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে এই ঝর্ণার অবস্থান। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে দেখা যায়। যে পাহাড়ে ঝর্ণাটি অবস্থিত সেটি খৈয়াছড়া মোড়ের অধীনে পড়ে, তাই ঝর্ণার নাম খৈয়াছড়া ঝর্ণা।

পাহাড়ের গভীরে থাকায় কোনো যানবাহন সরাসরি জলপ্রপাতের পাদদেশে যেতে পারে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আপনি একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে জলপ্রপাত সংলগ্ন গ্রামে যেতে পারবেন। কিন্তু তারপর থেকে গ্রামের মধ্য দিয়ে জলপ্রপাতের মূল স্রোতে পৌঁছানোর একমাত্র পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা সফরে যা যা দেখবেন

এই জলপ্রপাতটিতে ৯ টি বড় জলপ্রপাত বা ধাপ রয়েছে, প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। মিরসরাই ঠাকুরদা দীঘিতেও পানি পড়ার শব্দ শোনা যায়। পথের ধারে, পাহাড়ের গভীরে, সবুজ গ্রামের পথ, বাঁশের বন, মাঠের করিডোর এবং বিভিন্ন আকারের গাছ। কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে অন্তত ৪টি পাহাড় অতিক্রম করতে হবে আপনাদের।

সবুজ গালিচা পেরিয়ে ঘণ্টার ঝমঝম আওয়াজ তাৎক্ষণিকভাবে যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করবে। এমন পরিবেশে একটি রাত ক্যাম্পিং করা একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার সঙ্গীত, পাখির কিচিরমিচির এবং পোকামাকড়ের আলো চিরকাল তোমার স্মৃতিতে খোদাই হয়ে থাকবে। আর সৌভাগ্যবশত যদি রাত পূর্ণিমা হয়, তাহলে জীবনের ষোল আনা পূর্ণ হবে আপনাদের।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাত দেখার সেরা সময়

খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাতটিকে সর্বোত্তমভাবে দেখার জন্য, ভাটা, বন্যা এবং বৃষ্টির সময়কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করি। কারণ ঝরনার সৌন্দর্যের মূল উপাদান হলো পানির প্রবাহ। স্বাভাবিকভাবেই খৈয়াছড়া ঝর্ণা জলপ্রপাত দেখার জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে ভালো সময়। তবে বৃষ্টি ও মেঘের ক্ষেত্রে পাহাড়ি রাস্তার বিপদের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। তাই বর্ষার মাঝামাঝি সময়ের চেয়ে বর্ষা শেষ হওয়ার আগে বা পরে যাওয়াই ভালো বলে মনে করি।

কিভাবে ঢাকা থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবে

ঢাকা থেকে মিরসরাই

প্রথমত, ঢাকার যেকোনো বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে চড়ুন। নন-এসি বাসের দাম প্রায় ৪২০ টাকা থেকে প্রায় ৪৮০ টাকা। আর এসি ভাড়া দিতে হতে পারে প্রায় ৮০০ থেকে প্রায় ১,১০০ টাকা। এর জন্য মিরসরাইয়ের বারতাকিয়া বাজারের কাছে গিয়ে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে হবে।

এছাড়াও সয়দাবাদ স্টপ থেকে তুলনামূলক কম দামে লোকাল বাসে করে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে যে কোনো আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনী স্টেশনে যেতে হবে। ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে এখানে ভাড়া জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ফেনী স্টেশন থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকায় একটি রিকশা বা অটোরিকশা আপনাকে ফেনীর মহিপাল বাস স্টপে নামিয়ে দেবে। এখান থেকে বেশ কিছু লোকাল বাস খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে থামেন।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের সময় থাকার ব্যবস্থা

খৈয়াছড়া ঝর্ণার কাছে বা খৈয়াছড়ার বড়তাকিয়া বাজারে কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। যারা তাঁবুতে থাকার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণার পাদদেশে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হোটেলে রাত কাটাতে চাইলে সীতাকুণ্ডই একমাত্র ভরসা। সেখানে আপনি জনপ্রতি প্রায় ৫০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের হোটেল রুম পাবেন।

ট্র্যাকিংয়ের সময় বেশ কিছু খাবার হোটেল পাওয়া যায়। সেখানে আপনার পছন্দের খাবার অর্ডার করে ফেরার পথে খেতে পারেন। এখানে কম দামে সীমাহীন চাল ও ডালের সাথে বিভিন্ন ধরনের তরকারি পাওয়া যায়। ১০০ টাকায় ভাতের সঙ্গে ফার্মের মুরগি পাওয়া যায়, আর দেশি মুরগি চাইলে সেটা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়। সঙ্গে আলুভর্তা আর সালাদ যোগ করলে খরচ ১৪০ টাকা। এ ছাড়া মিরসারিতে ভালো খাবারের কিছু হোটেল আছে। যাইহোক, এটা মনে রাখা ভালো বিকাল ৫ টার পরে হোটেলের সব খাবার বন্ধ থাকে। আর সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট ও হোটেল আছে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের সময় কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা

  • বৃষ্টির সময় ছাড়াও অধিকাংশ সময় গুলোতে ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা অনেক পিচ্ছিল ও দুর্গম থাকে। বিশেষ করে একেবারে ওপরের ধাপগুলো খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হয় আরকি। তাই ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে তবেই ট্রেকিং শুরু করতে হবে আপনাদেরকে। এরপরেও তাড়াহুড়ো না করে সাবধানে ধীরে ধীরে প্রতি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
  • পানিতে এবং ঘাসেও জোঁক থাকতে পারে। তাই জোঁক ছাড়ানোর জন্য সঙ্গে গুল কিংবা লবণ রাখা ভালো।
  • বিকেল নামতে না নামতে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতে শুরু করবে। তাছাড়া সেখানে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কের তেমন সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই সঙ্গে শতভাগ চার্জ দেওয়া পাওয়ার ব্যাংক রাখবেন এবং ভালো নতুন ব্যাটারির টর্চলাইট রাখতে হবে আপনাদেরকে।
  • অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের সময় আটকে পড়ার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। তাই যতটা সম্ভব সকাল সকাল এখানে আসার চেষ্টা করতে হবে।
  • সঙ্গে হাল্কা খাবার, পানির বোতল নেওয়া হলে সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
  • স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা, বিশেষত দোকান থেকে কিছু কেনা বা গাইডের সঙ্গে লেনদেনের সময় ভালো ব্যবহার করতে হবে সবার। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে স্থানীয় লোকজনসহ অন্যান্য ভ্রমণকারীদের অসুবিধা হয়ে থাকে।

2 Comments

    • Uttom Sarkar

      Thanks for your valuable feedback

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *